ময়মনসিংহ ০৯:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঐতিহ্যের মাটিতে গড়ে ওঠা সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত ময়মনসিংহ বিভাগ

গ্রাফিক্স: প্রতিদিনের ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ: বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত ময়মনসিংহ বিভাগ একদিকে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর, অন্যদিকে ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে ময়মনসিংহকে দেশের অষ্টম বিভাগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে বিভাগের আয়তন প্রায় ১০,৪৮৫ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখেরও বেশি। ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোণা — এই চারটি জেলা নিয়ে গঠিত এ বিভাগকে বলা হয় ‘বাংলাদেশের হৃদয়ভূমি’।

ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত ময়মনসিংহ শহর বিভাগীয় সদর দপ্তর হিসেবে পরিচিত। ব্রিটিশ আমল থেকেই এটি প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে বিকশিত হয়। একসময় এটি ছিল ময়মনসিংহ জেলার সদর, পরে বিভাগে উন্নীত হয়। নদীর প্রভাবে এই অঞ্চলে গড়ে উঠেছে এক সমৃদ্ধ নদীকেন্দ্রিক জীবনযাত্রা। জেলেদের নৌকা, ধানক্ষেতের সবুজ শোভা আর গ্রামীণ জীবনের সরলতা এখনো এই অঞ্চলের পরিচয় বহন করে।

ময়মনসিংহের ইতিহাস মোগল আমল পর্যন্ত প্রসারিত। তখন এটি “মোমেনশাহী পরগনা” নামে পরিচিত ছিল। ১৭৮৭ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে স্থাপিত হয় ময়মনসিংহ জেলা, যা পরে বৃহত্তর ময়মনসিংহ নামে খ্যাত হয়। পরবর্তীতে বিভক্ত হয়ে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোণা পৃথক জেলা হিসেবে গড়ে ওঠে।

সংস্কৃতি ও সাহিত্যচর্চার দিক থেকে ময়মনসিংহ বাংলাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল। “ময়মনসিংহ গীতিকা” বাংলা লোকসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ, যেখানে বাঙালি সমাজের প্রেম, বেদনা ও মানবিকতার গল্প গাঁথা আছে। “মহুয়া”, “মলুয়া”, “চন্দ্রাবতী” ও “দেওয়ানা মদিনা” গীতিকা আজও গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রাণ। বাংলার প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতী এখানকার কন্যা, যিনি বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য সৃষ্টি হিসেবে নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে রচনা করেছিলেন “রামায়ণ”।

ময়মনসিংহকে অনেকেই “বাংলার অক্সফোর্ড” বলে আখ্যা দেন। কারণ, শিক্ষা ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের অবদান অনন্য। ১৮৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত আনন্দমোহন কলেজ একসময় পূর্ববঙ্গের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ছিল। এখান থেকেই বহু গুণী ব্যক্তি বেরিয়ে এসে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (BAU) দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কৃষি গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। এখানকার গবেষণা দেশের কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, মোমেনশাহী গার্লস ক্যাডেট কলেজ, ময়মনসিংহ প্রকৌশল কলেজ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এবং নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়— সব মিলিয়ে এই বিভাগ এখন উচ্চশিক্ষার এক উজ্জ্বল কেন্দ্র।

প্রকৃতির দানও ময়মনসিংহকে করেছে অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত। নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি এলাকার নীলচে পানির লেক, চুনাপাথরের পাহাড় ও গারো পাহাড়ের সবুজ বন দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। গারো, হাজং ও বানাই সম্প্রদায়ের বসবাস এই অঞ্চলে বৈচিত্র্য এনেছে। শেরপুরের গারো পাহাড় অঞ্চলও সমান আকর্ষণীয়। গাজনী অবকাশ কেন্দ্র, রাজার পাহাড়, বালিজুরি ঝরনা ও মধুটিলা ইকোপার্ক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যেরও ভাণ্ডার। অন্যদিকে জামালপুরের চরাঞ্চলের জীবনযাত্রা, মাটির ঘর আর কৃষিনির্ভর জীবন পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।

অর্থনীতির ভিত্তি মূলত কৃষি। উর্বর মাটিতে ধান, গম, পাট, আলু, আখ ও সবজি উৎপাদিত হয় প্রচুর পরিমাণে। ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলার মৎস্য খাত দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। এ অঞ্চলকে এখন “ফিশ হাব” বলা হয়। তেলাপিয়া, রুই, কাতলা, শিং, মাগুরসহ নানা প্রজাতির মাছ চাষে ময়মনসিংহের খ্যাতি দেশজুড়ে। পাশাপাশি পোল্ট্রি, দুগ্ধ খামার ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। জামালপুরে হাতে তৈরি চটপণ্য ও তাঁত শিল্প এবং শেরপুরে কাঠ ও বাঁশের কুটির শিল্প স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে।

ময়মনসিংহের মানুষ সহজ-সরল, পরিশ্রমী ও অতিথিপরায়ণ। এখানকার সংস্কৃতি এখনো জীবন্ত। ভাওয়াইয়া, বাউল, মারফতি গান, ঢোল ও বাঁশির সুরে মুখরিত হয় গ্রামীণ উৎসব। বৈশাখী মেলা, হালখাতা, গারো সম্প্রদায়ের “ওয়াংগালা” উৎসব ও নেত্রকোণার “দেওয়ানগঞ্জ মেলা” এই অঞ্চলের ঐতিহ্যের প্রতীক। লোকনাট্য ও পালাগানের ঐতিহ্যও ময়মনসিংহে আজো টিকে আছে। “মহুয়া-মলুয়া” বা “চন্দ্রাবতী” গীতিকা আজও গ্রামীণ মঞ্চে পরিবেশিত হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ময়মনসিংহ বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দৃশ্যমান। ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন মহাসড়ক রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করেছে। রেল যোগাযোগের আধুনিকায়ন, নতুন শিল্পাঞ্চল স্থাপন এবং গারো পাহাড়ে পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নও চলছে দ্রুতগতিতে।

তবে কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে। চরাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। হাওর অঞ্চলে বন্যা ও নদীভাঙন কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন নানা উদ্যোগ নিয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ আজ বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় অঞ্চল। কৃষি, মৎস্য, শিক্ষা, পর্যটন ও শিল্প— প্রতিটি ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। ব্রহ্মপুত্র নদ যেমন এই ভূখণ্ডের প্রাণ, তেমনি এখানকার মানুষই এর আত্মা। তাদের শ্রম, উদ্যম ও ঐক্য ময়মনসিংহকে এগিয়ে নিচ্ছে নতুন দিগন্তের পথে।

ব্রহ্মপুত্রের তীরে যখন সূর্য ডুবে যায়, নদীতে নৌকার সারি ভেসে চলে— তখন স্পষ্ট বোঝা যায়, ময়মনসিংহ বিভাগ আজ শুধুই একটি প্রশাসনিক অঞ্চল নয়; এটি বাংলাদেশের মাটির গন্ধে মিশে থাকা মানুষের স্বপ্ন এবং ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি।

জনপ্রিয়

ওসি ওবায়দুর রহমানের নেতৃত্বে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ঈর্ষণীয় অগ্রগতি

ঐতিহ্যের মাটিতে গড়ে ওঠা সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত ময়মনসিংহ বিভাগ

প্রকাশের সময়: ০৩:৩২:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

ময়মনসিংহ: বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত ময়মনসিংহ বিভাগ একদিকে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর, অন্যদিকে ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে ময়মনসিংহকে দেশের অষ্টম বিভাগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে বিভাগের আয়তন প্রায় ১০,৪৮৫ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখেরও বেশি। ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোণা — এই চারটি জেলা নিয়ে গঠিত এ বিভাগকে বলা হয় ‘বাংলাদেশের হৃদয়ভূমি’।

ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত ময়মনসিংহ শহর বিভাগীয় সদর দপ্তর হিসেবে পরিচিত। ব্রিটিশ আমল থেকেই এটি প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে বিকশিত হয়। একসময় এটি ছিল ময়মনসিংহ জেলার সদর, পরে বিভাগে উন্নীত হয়। নদীর প্রভাবে এই অঞ্চলে গড়ে উঠেছে এক সমৃদ্ধ নদীকেন্দ্রিক জীবনযাত্রা। জেলেদের নৌকা, ধানক্ষেতের সবুজ শোভা আর গ্রামীণ জীবনের সরলতা এখনো এই অঞ্চলের পরিচয় বহন করে।

ময়মনসিংহের ইতিহাস মোগল আমল পর্যন্ত প্রসারিত। তখন এটি “মোমেনশাহী পরগনা” নামে পরিচিত ছিল। ১৭৮৭ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে স্থাপিত হয় ময়মনসিংহ জেলা, যা পরে বৃহত্তর ময়মনসিংহ নামে খ্যাত হয়। পরবর্তীতে বিভক্ত হয়ে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোণা পৃথক জেলা হিসেবে গড়ে ওঠে।

সংস্কৃতি ও সাহিত্যচর্চার দিক থেকে ময়মনসিংহ বাংলাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল। “ময়মনসিংহ গীতিকা” বাংলা লোকসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ, যেখানে বাঙালি সমাজের প্রেম, বেদনা ও মানবিকতার গল্প গাঁথা আছে। “মহুয়া”, “মলুয়া”, “চন্দ্রাবতী” ও “দেওয়ানা মদিনা” গীতিকা আজও গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রাণ। বাংলার প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতী এখানকার কন্যা, যিনি বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য সৃষ্টি হিসেবে নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে রচনা করেছিলেন “রামায়ণ”।

ময়মনসিংহকে অনেকেই “বাংলার অক্সফোর্ড” বলে আখ্যা দেন। কারণ, শিক্ষা ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের অবদান অনন্য। ১৮৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত আনন্দমোহন কলেজ একসময় পূর্ববঙ্গের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ছিল। এখান থেকেই বহু গুণী ব্যক্তি বেরিয়ে এসে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (BAU) দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কৃষি গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। এখানকার গবেষণা দেশের কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, মোমেনশাহী গার্লস ক্যাডেট কলেজ, ময়মনসিংহ প্রকৌশল কলেজ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এবং নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়— সব মিলিয়ে এই বিভাগ এখন উচ্চশিক্ষার এক উজ্জ্বল কেন্দ্র।

প্রকৃতির দানও ময়মনসিংহকে করেছে অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত। নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি এলাকার নীলচে পানির লেক, চুনাপাথরের পাহাড় ও গারো পাহাড়ের সবুজ বন দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। গারো, হাজং ও বানাই সম্প্রদায়ের বসবাস এই অঞ্চলে বৈচিত্র্য এনেছে। শেরপুরের গারো পাহাড় অঞ্চলও সমান আকর্ষণীয়। গাজনী অবকাশ কেন্দ্র, রাজার পাহাড়, বালিজুরি ঝরনা ও মধুটিলা ইকোপার্ক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যেরও ভাণ্ডার। অন্যদিকে জামালপুরের চরাঞ্চলের জীবনযাত্রা, মাটির ঘর আর কৃষিনির্ভর জীবন পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।

অর্থনীতির ভিত্তি মূলত কৃষি। উর্বর মাটিতে ধান, গম, পাট, আলু, আখ ও সবজি উৎপাদিত হয় প্রচুর পরিমাণে। ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলার মৎস্য খাত দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। এ অঞ্চলকে এখন “ফিশ হাব” বলা হয়। তেলাপিয়া, রুই, কাতলা, শিং, মাগুরসহ নানা প্রজাতির মাছ চাষে ময়মনসিংহের খ্যাতি দেশজুড়ে। পাশাপাশি পোল্ট্রি, দুগ্ধ খামার ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। জামালপুরে হাতে তৈরি চটপণ্য ও তাঁত শিল্প এবং শেরপুরে কাঠ ও বাঁশের কুটির শিল্প স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে।

ময়মনসিংহের মানুষ সহজ-সরল, পরিশ্রমী ও অতিথিপরায়ণ। এখানকার সংস্কৃতি এখনো জীবন্ত। ভাওয়াইয়া, বাউল, মারফতি গান, ঢোল ও বাঁশির সুরে মুখরিত হয় গ্রামীণ উৎসব। বৈশাখী মেলা, হালখাতা, গারো সম্প্রদায়ের “ওয়াংগালা” উৎসব ও নেত্রকোণার “দেওয়ানগঞ্জ মেলা” এই অঞ্চলের ঐতিহ্যের প্রতীক। লোকনাট্য ও পালাগানের ঐতিহ্যও ময়মনসিংহে আজো টিকে আছে। “মহুয়া-মলুয়া” বা “চন্দ্রাবতী” গীতিকা আজও গ্রামীণ মঞ্চে পরিবেশিত হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ময়মনসিংহ বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দৃশ্যমান। ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন মহাসড়ক রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করেছে। রেল যোগাযোগের আধুনিকায়ন, নতুন শিল্পাঞ্চল স্থাপন এবং গারো পাহাড়ে পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নও চলছে দ্রুতগতিতে।

তবে কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে। চরাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। হাওর অঞ্চলে বন্যা ও নদীভাঙন কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন নানা উদ্যোগ নিয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ আজ বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় অঞ্চল। কৃষি, মৎস্য, শিক্ষা, পর্যটন ও শিল্প— প্রতিটি ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। ব্রহ্মপুত্র নদ যেমন এই ভূখণ্ডের প্রাণ, তেমনি এখানকার মানুষই এর আত্মা। তাদের শ্রম, উদ্যম ও ঐক্য ময়মনসিংহকে এগিয়ে নিচ্ছে নতুন দিগন্তের পথে।

ব্রহ্মপুত্রের তীরে যখন সূর্য ডুবে যায়, নদীতে নৌকার সারি ভেসে চলে— তখন স্পষ্ট বোঝা যায়, ময়মনসিংহ বিভাগ আজ শুধুই একটি প্রশাসনিক অঞ্চল নয়; এটি বাংলাদেশের মাটির গন্ধে মিশে থাকা মানুষের স্বপ্ন এবং ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি।