ময়মনসিংহ ০৬:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৈশ্বিক ফিতনা থেকে বাঁচতে চাই নিবিড় জাতিগত ঐক্য

অলঙ্করণ: প্রতিদিনের ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ: ফিলিস্তিনের গাজায়, সিরিয়ার ইরানি দূতাবাস, মায়ানমারের আরাকানে, ভারতের গুজরাত-দিল্লি-আসাম থেকে সর্বত্র পুরো পৃথিবীব্যপী “অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ” শক্তিসমূহের কমন টার্গেট “মুসলিম” সম্প্রদায়।

“ইসলামোফোবিয়া” বা “ইসলামবিদ্বেষ” এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, স্বয়ং জাতিসংঘকে “ইসলামোফোবিয়া” বন্ধে বিশেষ ফরমান জারি করতে হয়েছে। কাগুজে সিংহ জাতিসংঘের মিঁউমিঁউ থোরাই কেয়ার করছে অমুসলিম নরপিশাচরা।

ফিলিস্তিনে অর্ধলক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে দখলদার ইসরায়েলের হাতে। ইসরায়েলের প্রধান অভিভাবক যুক্তরাষ্ট্র। এই যুক্তরাষ্ট্র ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া সহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে গণহত্যা করেছে।

ইসরায়েল-মার্কিনের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে গত এক দশকে মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। বাবরী মসজিদের জায়গায় বিলাসবহুল রামমন্দির উদ্বোধন হয়েছে। বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম ও ত্রিপুরার লক্ষ লক্ষ মুসলিম জনগোষ্ঠী চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক মুসলিমদেরকে কনসেনট্রেশান ক্যাম্প তথা বন্দিশিবিরে নেয়া হবে কিংবা ঠেলে দেয়া হবে বাংলাদেশের দিকে।

ইতোমধ্যে চীন, ভারত ও আমেরিকার যৌথ সহায়তায় মায়ানমারের আরাকান রাজ্য মুসলিমশূণ্য করে বিশ লক্ষাধিক মুসলিম রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। চীনের উইঘুর মুসলিমদের উপর নির্যাতনের খবর বিশ্ববিদিত।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ইসলামের নাম বেচে রাজনীতি করে, অথচ তারা বিশ্বের মুসলিমবিরোধী প্রধান মাফিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য দালাল। আরেক গ্রুপ ওয়াজের মঞ্চে চিল্লাচিল্লি করে হেলিকপ্টার নিয়ে ধর্ম বেচে বউবাচ্চা নিয়ে রিসোর্টে সময় কাটায়।

এদের অপকর্মের দায়ে ভুক্তভোগী সিংহভাগ ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমান। ইসলামোফোবিয়ার করাল আঘাতে এখন কেউ দাড়ি রাখলে বা ধর্মকর্ম পালন করলেই ট্যাগ খেতে হচ্ছে “জামায়াত”।

সেক্যুলার নামধারীরা এই ভূখন্ডের সবচেয়ে বড় ভণ্ড৷ এই ভণ্ডরা মনে করে ধর্মনিরপেক্ষ হতে হলে ইসলাম ত্যাগ করতে হবে! আর অসেক্যুলাররা ভাবে বাংলাদেশের সব অমুসলিম মেরে ফেললেই বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে!

এই ভয়ংকর বৈশ্বিক ও সামাজিক ফেতনার যুগে ন্যায় ও সত্যের পক্ষে নিজের ঈমান ঠিক রেখে কিভাবে চলবেন? উত্তর একটাই, নিবিড় অধ্যয়ন ও গভীর চিন্তন। যত পারেন ধর্মীয় জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে চেষ্টা করুন। ফিতনা বা হিংসা বৃদ্ধি হয়, এমন কর্মকান্ড ও আচরণ থেকে বিরত থাকুন। বেশি বেশি ইবাদত করুন। নিজের ও নিজের প্রতিবেশীর উপর সহনশীল আচরণ করুন। প্রতিবেশী অমুসলিম হলেও হিংসাত্মক পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকুন।

বৈশ্বিক ইসলামবিদ্বেষের মারাত্মক কুফলের শিকার হতে পারে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলো। বিশ্বমোড়লরা এটিই চাচ্ছে। বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে তাদের দুটো লাভ। এক. অস্ত্র বিক্রি, দুই. মুসলিমদের দুর্বল রাখা।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি ভয়ংকর মৃত্যুকূপের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। পার্বত্য উপজাতিদের সশস্ত্র আক্রমণ শুরু হয়েছে। পার্শ্ববর্তী রাখাইন ও মিজোরাম অস্থিতিশীল। মায়ানমার আর কিছুদিনের মধ্যে টুকরো টুকরো হয়ে যাবার মত পরিবেশ।

পশ্চিমা মিশনারি ট্রেনিংপ্রাপ্ত খ্রিষ্টান উপজাতি, আদিবাসী সশস্ত্র গোষ্ঠী আর রোহিঙ্গা মিলিশিয়া -সবমিলে এক বাজে অবস্থা।

মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ায় ইরান দূতাবাস ধ্বসিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। আল-আকসা ভেঙে দ্রুত থার্ড টেম্পল নির্মাণযজ্ঞ শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায়, ইসরায়েল যদি বেপরোয়াভাবে আল-আকসা ভেঙে ফেলে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটবে, এটি নিশ্চিত।

আর, ধর্মীয় ক্রুসেড আর বিশ্বযুদ্ধের এই চরম বিপর্যস্ত মূহুর্তে আমাদের প্রয়োজন একইসঙ্গে ধর্মীয় ও জাতিগত ঐক্য। শেষ কথা এটিই বলতে চাই, বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে নিবিড় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত না হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আমরাই হবো- লিখে রাখুন!

লেখক: উদ্যোক্তা ও সংগঠক

জনপ্রিয়

শেরপুরে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে বৃদ্ধ গ্রেফতার

বৈশ্বিক ফিতনা থেকে বাঁচতে চাই নিবিড় জাতিগত ঐক্য

প্রকাশের সময়: ০৮:০৩:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০২৪

ময়মনসিংহ: ফিলিস্তিনের গাজায়, সিরিয়ার ইরানি দূতাবাস, মায়ানমারের আরাকানে, ভারতের গুজরাত-দিল্লি-আসাম থেকে সর্বত্র পুরো পৃথিবীব্যপী “অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ” শক্তিসমূহের কমন টার্গেট “মুসলিম” সম্প্রদায়।

“ইসলামোফোবিয়া” বা “ইসলামবিদ্বেষ” এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, স্বয়ং জাতিসংঘকে “ইসলামোফোবিয়া” বন্ধে বিশেষ ফরমান জারি করতে হয়েছে। কাগুজে সিংহ জাতিসংঘের মিঁউমিঁউ থোরাই কেয়ার করছে অমুসলিম নরপিশাচরা।

ফিলিস্তিনে অর্ধলক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে দখলদার ইসরায়েলের হাতে। ইসরায়েলের প্রধান অভিভাবক যুক্তরাষ্ট্র। এই যুক্তরাষ্ট্র ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া সহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে গণহত্যা করেছে।

ইসরায়েল-মার্কিনের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে গত এক দশকে মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। বাবরী মসজিদের জায়গায় বিলাসবহুল রামমন্দির উদ্বোধন হয়েছে। বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম ও ত্রিপুরার লক্ষ লক্ষ মুসলিম জনগোষ্ঠী চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক মুসলিমদেরকে কনসেনট্রেশান ক্যাম্প তথা বন্দিশিবিরে নেয়া হবে কিংবা ঠেলে দেয়া হবে বাংলাদেশের দিকে।

ইতোমধ্যে চীন, ভারত ও আমেরিকার যৌথ সহায়তায় মায়ানমারের আরাকান রাজ্য মুসলিমশূণ্য করে বিশ লক্ষাধিক মুসলিম রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। চীনের উইঘুর মুসলিমদের উপর নির্যাতনের খবর বিশ্ববিদিত।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ইসলামের নাম বেচে রাজনীতি করে, অথচ তারা বিশ্বের মুসলিমবিরোধী প্রধান মাফিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য দালাল। আরেক গ্রুপ ওয়াজের মঞ্চে চিল্লাচিল্লি করে হেলিকপ্টার নিয়ে ধর্ম বেচে বউবাচ্চা নিয়ে রিসোর্টে সময় কাটায়।

এদের অপকর্মের দায়ে ভুক্তভোগী সিংহভাগ ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমান। ইসলামোফোবিয়ার করাল আঘাতে এখন কেউ দাড়ি রাখলে বা ধর্মকর্ম পালন করলেই ট্যাগ খেতে হচ্ছে “জামায়াত”।

সেক্যুলার নামধারীরা এই ভূখন্ডের সবচেয়ে বড় ভণ্ড৷ এই ভণ্ডরা মনে করে ধর্মনিরপেক্ষ হতে হলে ইসলাম ত্যাগ করতে হবে! আর অসেক্যুলাররা ভাবে বাংলাদেশের সব অমুসলিম মেরে ফেললেই বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে!

এই ভয়ংকর বৈশ্বিক ও সামাজিক ফেতনার যুগে ন্যায় ও সত্যের পক্ষে নিজের ঈমান ঠিক রেখে কিভাবে চলবেন? উত্তর একটাই, নিবিড় অধ্যয়ন ও গভীর চিন্তন। যত পারেন ধর্মীয় জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে চেষ্টা করুন। ফিতনা বা হিংসা বৃদ্ধি হয়, এমন কর্মকান্ড ও আচরণ থেকে বিরত থাকুন। বেশি বেশি ইবাদত করুন। নিজের ও নিজের প্রতিবেশীর উপর সহনশীল আচরণ করুন। প্রতিবেশী অমুসলিম হলেও হিংসাত্মক পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকুন।

বৈশ্বিক ইসলামবিদ্বেষের মারাত্মক কুফলের শিকার হতে পারে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলো। বিশ্বমোড়লরা এটিই চাচ্ছে। বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে তাদের দুটো লাভ। এক. অস্ত্র বিক্রি, দুই. মুসলিমদের দুর্বল রাখা।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি ভয়ংকর মৃত্যুকূপের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। পার্বত্য উপজাতিদের সশস্ত্র আক্রমণ শুরু হয়েছে। পার্শ্ববর্তী রাখাইন ও মিজোরাম অস্থিতিশীল। মায়ানমার আর কিছুদিনের মধ্যে টুকরো টুকরো হয়ে যাবার মত পরিবেশ।

পশ্চিমা মিশনারি ট্রেনিংপ্রাপ্ত খ্রিষ্টান উপজাতি, আদিবাসী সশস্ত্র গোষ্ঠী আর রোহিঙ্গা মিলিশিয়া -সবমিলে এক বাজে অবস্থা।

মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ায় ইরান দূতাবাস ধ্বসিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। আল-আকসা ভেঙে দ্রুত থার্ড টেম্পল নির্মাণযজ্ঞ শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায়, ইসরায়েল যদি বেপরোয়াভাবে আল-আকসা ভেঙে ফেলে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটবে, এটি নিশ্চিত।

আর, ধর্মীয় ক্রুসেড আর বিশ্বযুদ্ধের এই চরম বিপর্যস্ত মূহুর্তে আমাদের প্রয়োজন একইসঙ্গে ধর্মীয় ও জাতিগত ঐক্য। শেষ কথা এটিই বলতে চাই, বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে নিবিড় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত না হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আমরাই হবো- লিখে রাখুন!

লেখক: উদ্যোক্তা ও সংগঠক