
ময়মনসিংহ: মায়ের দুধ কেবল শিশুর খাবার নয়, এটি একপ্রকার জীবন্ত ওষুধ। গবেষণা বলছে, কোনো ফর্মুলা দুধের সঙ্গেই এর তুলনা চলে না।
শিশুর জন্মের পর প্রথম যে দুধ বের হয়, তাকে কলোস্ট্রাম বলা হয়। এটি ঘন ও হলুদাভ রঙের হয় এবং এতে থাকে প্রচুর প্রোটিন ও অ্যান্টিবডি যেমন সিক্রেটরি IgA ও ল্যাকটোফেরিন, যা সংক্রমণ ও প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে। সময়ের সাথে সাথে দুধ সাদা হয়ে যায় এবং এতে ল্যাকটোজ ও চর্বির পরিমাণ বাড়ে, যা শিশুর প্রধান শক্তির উৎস।
একই ফিডিংয়ের সময়ও মায়ের দুধের গঠন পরিবর্তিত হয়। শুরুতে দুধ কিছুটা পাতলা থাকে, আর শেষে থাকে বেশি চর্বি। শিশুর বয়স, প্রিম্যাচিউর জন্ম, এমনকি মায়ের খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ীও দুধের গঠন ভিন্ন হয়। এতে থাকে গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন যেমন কেসিন, α-ল্যাক্টালবুমিন ও বিভিন্ন এনজাইম, যা শিশুকে পুষ্টি হজমে সাহায্য করে। মায়ের দুধের চর্বি শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে এবং এগুলোর গঠন নির্ভর করে মায়ের খাদ্যে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের ওপর, বিশেষ করে ওমেগা-৩।
এছাড়াও এতে থাকে ল্যাকটোজের মতো কার্বোহাইড্রেট, যা শক্তি দেয়, এবং অলিগোস্যাকারাইড, যা ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায় ও ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। অধিকাংশ ভিটামিন ও খনিজ যথেষ্ট পরিমাণে থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন বি১২, ডি ও আয়োডিন সম্পূরক আকারে প্রয়োজন হতে পারে। শুধু পুষ্টিই নয়, মায়ের দুধে থাকে হরমোন, স্টেম সেল, গ্রোথ ফ্যাক্টর এবং বিশেষ উপাদান যেমন HAMLET ও TRAIL, যা ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করতে পারে কিন্তু সুস্থ কোষের ক্ষতি করে না। এছাড়া মাইক্রোআরএনএ ও মায়ো-ইনোসিটল রয়েছে, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের সংযোগ উন্নত করে। সিজারিয়ান সেকশনে জন্ম নেওয়া শিশুরা মায়ের দুধের মাইক্রোবায়োম থেকে বিশেষভাবে উপকৃত হয়, কারণ এটি তাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য গড়ে তোলে।
যত দীর্ঘ সময় শিশু মায়ের দুধ পান করে, তত বেশি উপকার পায়। স্তন্যপানের পরবর্তী পর্যায়ের দুধে প্রোটিন, অ্যান্টিবডি ও রোগপ্রতিরোধক উপাদান আরও বেশি থাকে। এমনকি টডলারদের জন্যও মায়ের দুধ উচ্চমাত্রায় পুষ্টিকর ও সুরক্ষাদায়ক। এতে ৮৭% পানি থাকে, যা গরম আবহাওয়াতেও শিশুকে হাইড্রেটেড রাখে এবং শিশুর প্রয়োজন অনুযায়ী দুধের গঠন মানিয়ে নেয়। যদিও মায়ের দুধ পাম্প করে খাওয়ানো হলেও তা উপকারী, তবে সরাসরি স্তন্যপান শিশুকে অতিরিক্ত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দেয় ত্বকের সংস্পর্শের মাধ্যমে।
কোনো ফর্মুলা দুধ মায়ের দুধের জীবন্ত, বায়োঅ্যাকটিভ জটিলতার সমান নয়। মূল পার্থক্য হলো—ফর্মুলা একটি নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় পণ্য, কিন্তু মায়ের দুধ হলো এক জীবন্ত তরল, যা শিশুর নির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুযায়ী মানিয়ে নেয়। ফর্মুলা দুধ কেবলমাত্র ন্যূনতম পুষ্টির মান পূরণ করে, কিন্তু শিশুর তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য ও বিকাশের চাহিদা অনুযায়ী উপাদান যোগ করতে পারে না।
প্রথম দিনে তৈরি একটি ফর্মুলা বোতল ও এক মাস পর তৈরি বোতল একেবারেই একই থাকে। এটি চর্বি বা প্রোটিনের পরিমাণ বাড়াতে বা কমাতে পারে না, আবার নতুন কোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করতেও সক্ষম নয়। উদাহরণস্বরূপ, কিছু ফর্মুলায় প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিক যোগ করা হলেও, তা শিশুর পরিবর্তনশীল অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের মতো গতিশীলভাবে মানিয়ে নিতে পারে না।