
ময়মনসিংহ: ত্রিশালের চেচুয়া-গলহর বিল—প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্যের ভাণ্ডার। পাশাপাশি অবস্থিত দুটি বিলের দু’দিকে যতদূর চোখ যায়, লাল শাপলার রক্তিম আভা, মাঝে মাঝে সাদা আর বেগুনি শাপলার মনোমুগ্ধকর শোভা।
উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের এই বিল দুটিতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন শতশত ভ্রমণপিপাসু। শাপলা ছুঁয়ে দেখা, পানিতে নেমে ফুল তুলে ছবি তোলা কিংবা নৌকায় করে ফুলের রাজ্যে ঘুরে বেড়ানো— সব মিলিয়ে দর্শনার্থীরা উপভোগ করছেন এক অন্যরকম আনন্দ। তবে অতিরিক্ত ফুল ছেঁড়া বিলের সৌন্দর্য কমিয়ে দিচ্ছে বলে সচেতন মহল নিয়ন্ত্রণ আরোপ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন।
সাধারণ দর্শনার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন কন্টেনক্রিয়েটর, ব্লগার, টিকটকার এবং ইউটিউবারদের প্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে এই বিলটি।

শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। কাদামাখা আইল ধরে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়, আবার শাপলা কাছ থেকে দেখতে নামতে হয় পানিতেও। জামাকাপড় ভিজলেও প্রকৃতির টানে কেউই পিছু হটেন না। এসব বিড়ম্বনা উপেক্ষা করে চাইলে নৌকায় চড়েও ঘুরে দেখা যায় বিলের সৌন্দর্য, তবে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে পর্যটকদের মাঝে অসন্তোষও রয়েছে।
বর্তমানে চেচুয়া বিল কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই পরিচিত। স্থানীয়ভাবে শাপলা তোলা নিষিদ্ধ করা হলেও তা মানছে না কেউ। এলাকাবাসীও দর্শনার্থীদের সহযোগিতা করছে। ফলে ধীরে ধীরে এটি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নিচ্ছে।
শাপলা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহের আফরোজ বলেন, “কাছাকাছি দূরত্বে শাপলা ফুলের এই বিশাল সমাহার দেখে আমি আনন্দে উদ্বেলিত। এখানে ঘুরতে এসে অনেক ভালো লেগেছে। শতশত মানুষ এই সৌন্দর্য দেখতে বিলে ভীড় জমাচ্ছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমরা স্থানীয় হিসেবে চেষ্টা করছি এই এলাকাকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলার। ফুলের সৌন্দর্য দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে অতিরিক্ত ফুল ছেড়া বন্ধ করতে এবং পর্যাপ্ত নৌকার ব্যবস্থা করে অতিরিক্ত ভাড়া কমাতে আমরা চেষ্টা করছি। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও এসব ক্ষেত্রে প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করলে আমাদের কাজটা আরও সহজ হবে।”

এই শাপলা ফুলকে কেন্দ্র করে এই এলাকায় একটি পর্যটন কেন্দ্র করার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেবেন কি-না জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারি বলেন, “চেচুয়ার শাপলা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে নিয়মিত অনেক মানুষ আসছে। যে কারণে এ এলাকাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ বিলের জমিজমা সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এখানে সরকারিভাবে পর্যটন কেন্দ্র করার কোনো সুযোগ নেই। তবে মানুষের চাহিদা বিবেচনায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও ফুল সংরক্ষণে গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করা যায় কি না তা বিবেচনা করে দেখবো।”
যেভাবে যাওয়া যাবে
ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড থেকে বালিপাড়া রোডে অটোভ্যানে ঠাকুরবাড়ি মোড় পর্যন্ত (ভাড়া ১০ টাকা)। সেখান থেকে হেঁটে বা ভ্যানে করে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় শাপলা বিলে।